পরিবারে নানা বয়সের মানুষ থাকে, এক এক খাবার এক এক বয়সির জন্য ভাল এবং অন্য বয়সির জন্য ভাল নয়। সবার জন্য আলাদা আলাদা রান্না করাও সম্ভব নয় তবুও রান্নাকারী যখন রান্না করেন তখন মোটামুটি সবাইকে চিন্তা করেই রান্না করে থাকেন। আর যেটা রান্না করা হয় একজন রান্নাকারী এটা মাথায় রাখেন যে, যেন সবাই তা খেতে পারে বা সবার শরীরের জন্য কাজে লাগে (কিছু রান্নাতে এটা চিন্তা করা হয় না)। তাই মোটামুটি ঝাল কমিয়ে, শক্ত না রেখে তা রান্না করা হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের যাতে খেতে সমস্যা না হয় তা এটা সব সময়েই একজন রান্নাকারীর মাথায় থাকে। যাই হোক, পরিবারের সবার জন্য রান্না চিন্তাটা মোটামুটি সহজভাবে দেখা হলেও তা সহজ নয়, একজন মা বা বাজারকারীকে এই বিষয়ে সব সময়ে সচেষ্ট থাকতে হয় এবং তিনি বা তারা এটা করেন বলেই, সবাই খাবার টেবিলে খাবার পেয়ে থাকে।
যাই হোক, চলুন আজ আপনাদের এমনি একটা সুন্দর খাবারের কথা শুনাবো, যা আশা করি সবাই খেতে পারবে, সুইট এন্ড সাওয়ার চিকেন চিজ বল! চিকেন দিয়ে একটা অসাধারণ রান্না, খেতে সুস্বাদু, ছেলে বুড়ো সবাই খাবে। চলুন দেখে ফেলি।
উপকরণ ও প্রনালীঃ (উপকরণ ও প্রনালী এক সাথে দেয়া হল ভাল করে বুঝার জন্য তবে আপনারা রান্না শুরু করার আগে সব উপকরণ হাতের কাছে যোগাড় করে নিতে ভুলবেন না)
চিজ প্রিপারেশনঃ

দেশী চিজ বা পনির ব্যবহার করা হয়েছে, আপনারা চাইলে অন্য যে কোন চিজ ব্যবহার করতে পারেন।

৫০ গ্রাম চিজে গোটা ১০/১৫টা চিজ বল বানানো যেতে পারে।

চিজ গুলো এভাবে কেটে ছোট পিস করে নিন এবং তাতে এক চিমটি মরিচ গুড়া ছিটিয়ে রাখুন।
চিকেন প্রিপারেশন ও চিজ বল অনুষাঙ্গিকঃ

হাড় ছাড়া চিকেনের বুকের মাংস নিন, ২০০ গ্রাম দিয়ে গোটা ১০ বল বানানো যেতে পারে। মাংস গুলো পাতলা করে কেটে থেতিয়ে নিয়ে গ্রাইড করে নিতে পারেন অথবা বেটে নিতে পারেন।

চিকেন বলের উপকরণঃ চিকেন পেষ্ট, পেঁয়াজ কুঁচি, ধনিয়া পাতা কুঁচি, হাফ চামচ লাল গুড়া মরিচ (ঝাল বেশি হলে কম), লবন ও দুই চিমটি গোল মরিচ গুড়া।

ভাল করে উল্লেখিত উপকরণ মেখে নিন।

এবার বল বানাতে শুরু করুন। এক গোলা চিকেন মিক্স এভাবে নিয়ে তার মধ্য চিজের এক টুকরা দিয়ে গোল করে নিন।

এই তো চিজ চিকেন বল হয়ে গেল, এভাবে বল গুলো বানিয়ে সাজিয়ে রাখুন।
চিকেন চিজ বল ভেঁজে নেয়াঃ

চিকেন চিজ বল গুলো ডুবো বা গা গা তেলে ভাঁজতে হবে। তেল গরম করে তাতে সাবধানে একে একে বল গুলো দিতে থাকুন।

এভাবে ভাঁজুন।

এক পিট হয়ে গেলে অন্য পিট উল্টে দিন।

চিকেন বল গুলো কেমন রঙ রাখবেন তা আপনি নিজেই নির্ধারন করে নিতে পারেন মানে কম বা বেশি ভাঁজা। তবে মিনিট ৮/১০ এর ভাঁজাতেই বল গুলো খাবার উপযুক্ত হয়ে পড়ে।

এবার বল গুলো তুলে রাখুন এবং মুল রান্নায় চলে যেতে পারেন।
মুল রান্নাঃ

মুল রান্নার উপকরন –
– হাফ কাপের কম পেঁয়াজ বাটা বা কুঁচি (আমরা সামান্য বেটে নিয়েছি)
– দেড় চা চামচ আদা বাটা
– দুই চা চামচ রসুন বাটা
– সসেস মিক্স (টমেটো সস ৪ টেবিল চামচ, সয়াসস ২ কর্ক, ওয়েষ্টার সস ২ কর্ক, ভিনেগার ১ কর্ক, মরিচ গুড়া ১ চিমটি, চিনি দেড় চা চামচ মিষ্টি স্বাদ আপনি কেমন চান তার উপর নির্ভর করে চিনি দিতে হয়, সামান্য অনুমান করে লবন কারন শেষে স্বাদ দেখে দেয়ার সুযোগ আছে, কিছু পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে এক বাটি মিক্স বানিয়ে নিতে হবে)
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– তেল (৪/৫ টেবিল চামচ)
– ধনিয়া পাতার কুঁচি (সাজিয়ে দেয়ার জন্য না হলে নাই, আমরা কাঁচা মরিচ দিয়ে সাজিয়েছি)

মুল রান্না শুরু করুন, কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ আদা রসুন ভাল করে ভেঁজে নিন।

ঘ্রান বের হলে বা পেঁয়াজের রঙ সোনালী হইয়ে যাবে, আগুনের আঁচ মাধ্যম থাকবে।

এবার মিক্স সসেস দিয়ে দিন।

ভাল করে জ্বাল দিয়ে তেল উঠিয়ে নিতে হবে। আগুন মাধ্য আঁচে থাকবে, চুলার ধার ছেড়ে চলে যাবেন না, নাড়াতে নাড়াতে রান্না চলবে।

এবার তুলে রাখা চিকেন চিজ বল গুলো ও কয়েকটা মরিচ সহ দিয়ে দিন। ভাল করে নাড়িয়ে মিশিয়ে কয়েক মিনিট রেখে এক কাপ পানি দিন। (গরম পানি হলে ভাল না হলে নাই)

এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং আগুন মাধ্যম আঁচে রাখুন।

মাঝে মাঝে ঢাকনা উল্টে নাড়িয়ে দিন, ঝোল কেমন রাখবেন সেটা নিজে ভেবে নিন। ঝোল বেশী গাঢ় করতে চাইলে একটু বেশি সময় রাখুন (বিকল্প ভাবে ঝোল গাঢ় করতে এক চা চামচ চালের গুড়া হাফ কাপ পানিতে গুলিয়ে দিতে পারেন, আমরা তা করি নাই)। এবার ফাইন্যাল লবন স্বাদ দেখুন, লাগলে দিন। (এই অবস্থায় মিষ্টি, টক স্বাদ চেঞ্জ করা যেতে পারে তবে তা করার দরকার নেই)। ব্যস, চুলা বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্য ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। হয়ে গেল!
পরিবেশনাঃ

পরিবেশন করুন।

উপরে ধনিয়া পাতার কুঁচি ছিটিয়ে দিতে পারেন, না থাকলে মরিচের ফালি দিতে পারেন।

রুটি, পোলাউ, ভেজিটেবল রাইস বা ফ্রাইড রাইসের সাথে পরিবেশন করতে পারেন। নিঃসন্দেহে পরিবারের সবাই আনন্দ পাবে।
আমরা হোটেলে খাবারের চেয়ে ঘরে রান্না করা খাবারের ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করি। আসুন ঘরে মন ভরে ঘরে ভাল খাবার খাই! রান্না তেমন কঠিন কাজ নয়, শুধু প্রয়োজন রান্নার প্রতি ভালবাসা, ধৈর্য ও পরিবারের সকলের প্রতি মমতা।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
সুত্র: Recipe